
-ভাইসাহেব সব কিছুই ঠিক আছে। তয় দেনা-পাওনার কথাডা যদি একটু……….পুরো কথাটা শেষ না করে আমতা আমতা করলেন ছেলের বাবা।
-জি ভাইসাহেব। মেয়ের বাপ আমি। সমাজ রক্ষার্থে কিছুতো দিতে হবেই। তবে ভাইসাহেব আপনি আমার অবস্থাতো জানেনই।
-না না তেমন বেশি কিছুনা। পোলা আমার নতুন ব্যবসা করে। ব্যবসাডারে বড় করার লাইগ্যা ২লাক টেকা, একটা মোটর বাইক, মাইয়ার বিয়ার গয়না-গাটি আর ঘোর-দোর সাজায়া দিবেন!! এই যা। ছেলের বাবার আবদার শুনে হঠাৎ করেই করিম সাহেবের মুখের হাসি মলিন হয়ে গেল।-আপনিতো জানেন আমি সামান্য এক হাইস্কুলের শিক্ষক। আমার পক্ষেতো এত কিছু দেয়া সম্ভবনা। আমি শুধু ঘরের আসবাবপত্রই দিতে পারবো। (অনেকটা করুন সুরেই বললেন করিম সাহেব)
-কি কন এগুলা! এগুলা বেশি কিছু!! সামান্য কিছু টেকা আর একটা বাইকইতো!! কালা মাইয়ার বিয়া দিতে গেলে এগুলাতো সাথে দিতে ওইবই, নাকি? আমরাতো কমই চাইছি। অন্য কেউ ওইলেতো আপনের এই বাড়িডা শুদ্ধা টান দিতো! মিয়া আবার কথা কন!দরজার পাশে দাঁড়িয়ে নীলা তার বাবা আর ছেলের বাবার কথা শুনছিলো। তৃতীয় বারের মতো বরপক্ষ একই কারণ দেখিয়ে এই অযাচিত আবদার করলো যা তার বাবার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না। ঘরের এককোণে নীরবে কাদঁতে লাগলো নীলা!!
নীলা উচ্চশিক্ষিতা। চাকরি করছে। ভদ্র আর মার্জিত। সবার কাছেই নীলা সম্মানের পাত্রী। কিন্তু তার দোষ
বলতে ঐ একটাই!……গায়ের রং!নীলা কখনই চায়নি সুদর্শন কোন রাজকুমার এসে তাকে ঘোড়ায় চড়িয়ে তার রাজ্যে নিয়ে যাবে! নীলা কোন রাজ্যের রাজকুমারী বা রাজরানী হতে চায়নি!! নীলা চেয়েছিলো খুব সাধারন একজন কাউকে।
যেই মানুষটা তাকে বুঝবে,বন্ধুর মতো সারাটা জীবন তার পাশে থাকবে। প্রচন্ড গরমে তার জন্য এক পশলা বৃষ্টি হবে, বর্ষায় তার মাথার ছাউনি হবে, হাঁড় কাঁপানো শীতে উষ্ণ চাদর হবে। এতটুকুইতো নীলার চাওয়া!!
জানালা দিয়ে কান্নাভেজা চোখে আকাশের দিকে চেয়ে নীলা হয়ত তার সেই সাধারন মানুষটিকেই খুঁজছে!!!!
মন্তব্য করুনঃ