
গ্রামের মধ্যবিত্ত ঘরে জন্মগ্রহণ করায় এ পল্লীতে আমাদের যেতে দিতেন না অভিভাবকরা। তবু কেন জানি এ পাড়ায় আমদের আনাগোনা ছিল একটু বেশি। সেখানে যা দেখতাম তা এক কথায় অবর্ণনীয়। সামান্য খড়ের ছাউনি আর চারদিকে প্লাসটিকের কাগজে মোড়ানো আদ্ভুত জিনিসটাই হচ্ছে তাদের বাসস্থান। চৌকি-চেয়ার-খাটহীন ঘরে তারা শুয়ে থাকে গাদাগাদি করে। একটি ঘরের সাথেই লাগানো আর একটি ঘর, অল্প একটু জায়গায় তাদের শতাধিক ঘরের বসবাস। শুধু বাসস্থানের নিশ্চয়তা নেই তা নয়, নিশ্চয়তা নেই তাদের খাদ্যেরও।
পাড়ার পুরুষরা রিকশা চালায়, বদলা খাটে। মহিলারাবাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে সন্ধ্যায় ফিরে সামান্য কিছু খাদ্য নিয়ে। পুরো দিনের ক্ষুধার্ত সন্তানেরা তারই উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শুরু করে কে কার থেকে বেশি নেবে সেই প্রতিযোগিতা। সন্তানদের এই দূরবস্থার প্রতিযোগিতা দেখে সারাদিনের নিজের অনাহারের কথা ভুলে যায় মা।
যে মহিলাদের স্বামী আছে গভীর রাতে বাড়ি ফেরে তারা। হয়তো রোজগারের সমস্ত টাকা জুয়া খেলে উড়িয়ে দিয়েছে, নয়তো মদ খেয়ে ফুর্তি করেছে। বাড়ি ফিরে লম্বা হাক দেয় ‘ভাত কই বউ?’ নত মস্তকে শীর্ণদেহী আর ছিন্নবস্ত্রধারী বাচ্চাদের মা অস্ফুটে বলে ওঠে‘ভাত নেই।’ ‘কি কইলি মাগী, ভাত নেই মানে?’ বলেই পৈশাচিক নির্যাতন শুরু করে মহিলাটির উপর।
পুরোদিনের অনাহারে থাকায় স্বামীর অকথ্য নির্যাতনে প্রথমে কিছু আর্তনাদ শোনা গেলেও অচিরেই উবে যায় সেই আর্তনাদ।
মন্তব্য করুনঃ