
আমি আমার শর্ট-বায়ো’তে লিখে রেখেছি- “সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ- আর্কিটেকচার জীবনের জন্য ক্ষতিকর। ” হুটহাট করে লিখিনি, ছয়মাস ধরে আর্কিটেকচারের সাথে সংসার করে লিখেছি।
আগে রাতের তারা-ভর্তি আকাশের দিকে তাকালে প্রক্সিমা-সেন্ট্রাইকে খুঁজতাম, কালপুরুষ মিলানোর চেষ্টা করতাম, নক্ষত্রের পাশে হঠাৎ প্রেমিকাকেও দেখে ফেলতাম কখনো কখনো। এখন দেখি ডটের কম্পোজিশন, কোথায় ফোকাস পয়েন্ট, কোথাকার ফ্লো কোথায় গিয়ে শেষ।
আহারে! কত সাধ ছিলো ভার্সিটিতে উঠার পর অতি উৎসাহের সাথে সাহিত্যে মন দিবো, আমার আশার গুঁড়ে বালি। শ্রীজাত দা’র “অকালবৈশাখী” , ক্যারন আর্মস্ট্রং এর ‘দ্য কেস ফর গড’ কিনে রেখেছি। এখনো এক পৃষ্ঠাও পড়া হয় নি। “নরওয়েজিয়ান উড” অর্ধেক শেষ, বাকিটা ধরাই হচ্ছে না, অথচ গত বইমেলায় কেনা।
আমার জীবন আটকে গেছে ডি কে চিং এর “ফর্ম স্পেস এন্ড অর্ডার” বইয়ের মধ্যে। এই বই আর্কিটেকচারের স্টুডেন্টদের জন্য ধর্মগ্রন্থের মত। নিয়ম করে সকাল বিকাল রাতে দুই পৃষ্ঠার মত খেতে হয়। এতে আর্কি স্টুডেন্টদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
আমি যেহেতু Wrong side of the heaven এ জন্ম নিয়েছি, কাজেই এই ঔষুধ আমার কাজে লাগে না। ড্রাগ না পেলে এডিক্টেডদের অবস্থা যেমন হয়, আমি ছয়মাস সেই অবস্থায় কাটিয়ে দিলাম।
আর্কিটেকচারের টরচারে যখন চোখের নীচে কালি পড়ে যাচ্ছে, তখন প্রিয় বড় ভাইদের কাছে গিয়ে নিজের সাতকাহন শোনাই,যদি খানিকটা সান্ত্বনা পাওয়া যায় । তারা আমার পিঠে হাল্কা চাপড় দিয়ে বলেন, মাত্র ফার্স্ট ইয়ারেই এই অবস্থা, আরো দিন তো পড়েই আছে।
তাদের কথা শুনে আমার চোখের নীচে কালি গাঢ় হয়, বুকের ভয় অল্প থেকে ‘আরো’ হয় !
লেখালেখি ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা যখন প্রায় ফাইনাল করেই ফেলেছি, তখন মনে হলো – নাহ, এত সহজে রণে ভঙ্গ দেওয়া যাবে না। কত লেখক তো ছাত্র জীবনে কত কত কঠিন সাব্জেক্ট নিয়ে পড়েছেন। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ডাক্তার ছিলেন, বাড়ির পাশের হুমায়ুন আহমেদও তো রসায়নশাস্ত্রে পিএইচডি নিয়ে এসেছেন। তাহলে আমি একটু চেষ্টা করেই দেখি না!
আইডেনটিটি ক্রাইসিস যখন তুঙ্গে, আর্কিটেক্ট নাকি অথার, তখন ইন্সপিরেশন নিতে ‘Both architect and author’ লিখে গুগল করলাম। গুগল প্রায় এক মিনিট ৪৩ সেকেন্ড ব্যাপি চিরুনী অভিযান করে জানালো, এমন ব্যাক্তি পৃথিবীতে একজনই আছেন যিনি আর্কিটেক্ট এবং লেখক – তাঁর নাম ‘লিওন বাতিস্তা আলবার্তি’। ইতালিয়ান মানুষ, ১৪০৪ সালে জন্ম নিয়ে ১৪৭২ এ মারা গেছেন।
তিনি ছাড়া আর কেউই এই অসাধ্য সাধন করতে পারেননি।
এই ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিবো নাকি মোবাইলের ডেটা অফ করে পড়তে বসবো বুঝতে পারতেছি না।
মন্তব্য করুনঃ